আমার জয় আমি বাঙ্গালী, আমার ভয় আমি সমতলের বাঙ্গালী – Copy – Copy

একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখি আমি আমার নিজের ঘরে, নিজের বিছানার উপর শুয়ে আছি। আশেপাশে কোথাও কোন পাহাড় নেই, নেই সবুজের সমারোহ।চারিদিক জুড়ে শুধু মহাজগতিক অন্ধকার। এই অন্ধকারই আমাকে স্বস্তি দেয়। মনে মনে ভাবি যদি আর কোনদিন ভোরের আলো না জ্বলে তবে আমাকে আর দাড়াতেঁ হবে না স্বপ্নে দেখা সেই শিশুটির সামনে, পুড়তেঁ হবে না তার চোখের অগ্নিশিখায়। কিন্তু এই গুমোট অন্ধকারেও ষ্পষ্ট দেখতে পাই শিশুটির জ্বলন্ত চোখ। আমি শুনতে পাই তার কন্ঠস্বর। আমি ছুটে পালাই, মুখ লুকাতে চাই, সেও আসে আমার পিছু পিছু, আমি যেখানে যাই, সেও যায়। আমি লুকাতে পারি না, আমি এড়াতে পারি না।এই দু:স্বপ্ন আমাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়।

বেশিরভাগ স্বপ্নে মতোই এই দু:স্বপ্নটিও আদিহীন-অন্তহীন। আমি হেটে বেড়াচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতে। কিন্তু আমি যত সমুদ্রের কাছে যাই, সমুদ্র আমার কাছ থেকে তত দূরে সরে যায়। আমাকে দেখে গাছের পাতার সব ঝরে পড়ে যায়। পাখিরা হারায়। দূর থেকে ফুলের বাগান দেখতে সেদিকে ছুটি। আমাকে দেখা মাত্রই সব ফুল ঝরে পড়ে গেল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তীর্থভূমি বান্দারবানে পাহাড়ে উঠা মাত্রই, শুনতে পেলাম, পাহাড়েরর গুমোট কান্নার শব্দ। ক্লান্ত শ্রান্ত আমি পানির পিপাসায় কাতরে উঠি। নাফ নদীর পাড়ে দাড়িয়ে দেখি মাথার উপর সুয়র্ লাল লাল রাগী চোখে চোখ রাঙ্গাচ্ছে। আমি যতদূর হাটি দেখি নিবিড় অরণ্যভূমি মরুভূমি হয়ে আছে। গ্রাম্য বাজার দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে উঠে এই মন। কিন্তু আমি বাজারে পা রাখতেই ঝাপঁ বন্ধ হয়ে যায় সব দোকানের। ভিন গ্রহের প্রাণী দেখার মতো আমাকে দেখে ছুটে পালায় স্কুল ফেরত একদল কিশোর।

আমি চিৎ কার করে কাদতেঁ থাকি। আমার কান্নার শব্দ কোথাও প্রতিধ্বন্বিত হয় না। অভিশপ্ত আমি একা পড়ে থাকি বিরানভূমিতে। নরম কোমল হাতের ষ্পর্শে চমকে উঠি। তাকিয়ে দেখি একটি শিশু। নিষ্পাপ তার মুখচ্ছবি। আমি তাকিয়ে রই তার দিকে। তার চোখে চোখ পড়তেই দেখি সেখানে লাল লাল শিখা জ্বেলে আগুন জ্বলছে। আর সেই আগুনের মাঝে পরম শান্তিতে ধ্যানমগ্ন বসে আছে শান্তির বার্তা বাহক গৌতম বুদ্ধ। সেই আগুনে পুড়ে ছাই উড়াচ্ছে মানুষের বিবেক। ধর্মীয় মূল্যবোধ, বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধ। আমি আর তার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। উঠে দৌড়ে পালাতে চাইলাম। কিন্তু মাটি আমার পা আকড়েঁ ধরে রাখল। শিশুটি আমার চোখের গভীরে তার চোখ রেখে বলল : তুমি মুসলমান !! তুমি আগুন জ্বালাও !

আমি প্রতিবাদ করে বলতে গিয়েও থমকে গেলাম। আমি কি করে এই দায় এড়াবো।

আমি দাড়িয়ে রই। চারপাশ থেকে জনে জনে মানুষ আসতে থাকে। আমার চারপাশে ভিড় করে দাড়ায় তারা। তাদের কেউ বৌদ্ধ, কেউ হিন্দু, কেউ চাকমা, কেউ টিপরা, কেউ মারমা, কেউ গারো, কেউ মণিপুরি। তারা সবাই আমার চোখে চোখ রেখে তাকায়। আমি দেখতে পাই সেখানে আগুন-আগুন। কারো ঘর-বাড়ি পুড়ছে, কারো জুম খেত পুড়ছে। আমি সেই আগুনের উত্তাপ সহ্য করতে পারছিলাম না। তাদের কারো কারো চোখের জলে আমি দেখতে পাই কর্ণফুলি কে। যে কর্ণফুলি আমাদের দিয়েছে বিদুৎ  বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদের শত বছরের স্মৃতি। তাদের ঘর-বাড়ি। তাদের নিজের ভিটে মাটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করেছে। শত শত মানুষ সহায়-সম্বলহীন।

শত শত মানুষ সমস্বরে চিৎ কার করে বলে, তুমি মুসলমান !! তুমি বাঙ্গালী !! তুমি সমতলের মানুষ !!

আমি মাথা নিচুঁ করে দাড়িয়েঁ রই । আমার চোখ বেয়ে জল নেমে আসে। সেই জল মাটি গ্রহণ করে না।

ঘুম ভাঙ্গার কিছুক্ষণ পরেই মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা আসে। বন্ধু দিপ্র পাঠিয়েছে – “ চল! বান্দরবান, রাঙ্গামাটি থেকে ঘুরে আসি”।

আমি ভাবি, কিভাবে তাদের সামনে দাড়াবো। !! আমি যে মুসলমান, আমি যে বাঙ্গালী, আমি যে সমতলের অধিবাসী আমাদের ইতিহাস যেমন লেখা হয়েছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্মমতায়। তেমনি তাদের ইতিহাস লেখা হচ্ছে আমাকে ভিলেন চরিত্রে সাজিয়েঁ।

My Servces

Contact Me

Copyright ©2023 All rights reserved | Block is made with by Sourav Bhuiyan

Scroll to Top